ক্যালিফোরনিয়াম -- বিশ্বের সবচেয়ে দামি ধাতু
জুলাই ২৩, ২০২৪
0
ক্যালিফোরনিয়াম -- বিশ্বের সবচেয়ে দামি ধাতু
স্মাইল ইন্ডিয়া নিউজ বাংলা, শাশ্বতী চ্যাটার্জী :আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে দামি ধাতু কোনটি? আপনি যদি বলেন- স্বর্ন, হীরা বা প্লাটিনাম - তাহলে আপনি ভুল বলবেন। স্বর্ন, রুপা এইসমস্ত ধাতু খুঁজতে যে ধাতুর দরকার হয়, তার প্রতি গ্রামের দাম ১৭০.৯১ কোটি টাকা। তাহলে এবার আপনিই বলুন কে বেশি দামি। ধাতুটির নাম ক্যালিফোরনিয়াম। একে বলা হয় বিশ্বের সব চাইতে মূল্যবান ধাতু। ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোরনিয়া রেডিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ বিজ্ঞানী ক্যালিফোরনিয়াম ধাতুটি আবিষ্কার করেন। ক্যালিফরনিয়াম হচ্ছে একটি রেডিও এক্টিভ ধাতুর রাসায়নিক উপাদান। এটিকে কাজে লাগিয়ে সোনা রুপার উৎস স্থলের অনুসন্ধান করা হয়। এ ছাড়া ক্যালিফোরনিয়াম ২৫২ দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে মালপত্র না খুলে সেগুলো পরীক্ষা করে। মাটিতে কতটা আদ্রতা রয়েছে তা জানার জন্য পথ ও ভাবনা নির্মাণকারীরা এটিকে কাজে লাগিয়েছে। তরল তেলের স্তর বুঝতেও এটি ব্যবহার করা হয়। এই ধাতুটির এতো দাম হওয়ার কারণ আছে। কারণ ক্যালিফোরনিয়াম মৌলটি শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ায় উৎপাদন করা হচ্ছে। ক্যালিফোরনিয়াম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেনেসি একটি বহুমুখী বিজ্ঞান ও গবেষণা পরীক্ষাগার একলিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে এটি উৎপাদন করা হয়। এবং রাশিয়ায় পারমানবিক চুল্লি গবেষণাগার ইনস্টিটিটে ক্যালিফোরনিয়াম উৎপাদন করা হয়। ক্যালিফোরনিযামের তেজষ্ক্রিয় ও রাসয়নিক উপাদান সাধারণত পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়। এই উপাদানটি উৎপন্ন করতে বিকিরণ সুরক্ষিত বড়ো বড়ো প্লান্টের প্রয়োজন। এছাড়া এটি ব্যয় বহুল ও মূল্যবান হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এটি মাইক্রোগ্রাম পরিমানে উৎপাদিত হয়। বিশুদ্ধ ক্যালিফোরনিয়াম মৌলি কখনোই প্রকৃতিতে পাওয়া সম্ভব নয়। সেটি ক্যালিফোরনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎপাদিত হয়েছিল বলেই এটির নাম ক্যালিফোরনিয়াম । সব তেজষ্ক্রিয় মৌলের মতো ক্যালিফোরনিয়ামও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে উধাও হয়ে যায়। আর প্রকৃতিতে থেকে না, থাকতে পারে না। উধাও হওয়ার সময় খুবই ক্ষতিকারক নানান ধরনের তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ ঘটায়। এই উধারও হওয়ার আবার নির্ধারিত সময়সীমা আছে। তাকে বলে হসিলাইফ বা অধ্যায়ী। সারা বিশ্বে মাত্র কয়েক গ্রাম ক্যালিফোরনিয়ামের অস্তিত্ব রয়েছে। প্রতি বছর মাত্র আধা গ্রাম ক্যালিফোরনিয়াম উৎপাদিত হয়। এটি দেখতেও অনেকটা রুপার মতো। ক্যালিফোরনিয়াম সাবানের মতো নরম হওয়ায় ব্লেড দিয়ে সহজেই এটি কাটা যায়। এটি এতোই বিরল যে সারা বিশ্বে বছরে আধ গ্রাম ক্যালিফোরনিয়াম তৈরী হয়। সহজ কথায় পরমানু বোমা তৈরির উপকরণ হলো এই ক্যালিফোরনিয়াম । সাধারণ মানুষ এই ক্যালিফোরনিয়াম কিনতে বা বিক্রি করতে পারে না। এটি কিনতে বা বিক্রি করতে লাগবে লাইসেন্স। ক্যালিফোরনিয়ম মানুষের চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাহায্য করে। এটি দিয়ে হাড়ের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে জানা যায়। ক্যাসারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় মূল্যবান এই ধাতু। এছাড়া এক্সরে মেশিনেও এই ধাতু ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ওভারিয়ান ও সার্ভাকাল ক্যান্সারেও এটি ব্যবহার করা হয়। তবে সরাসরি এর সংস্পর্শে এলে কোনো মানুষ বা প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রাণঘাতী হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলতে পারে এটি। এমনকি বন্ধ্যাত্ব আনতে পারে এই ধাতু।