এ বছর হড়পা বাণে ভাসতে পারে উত্তরবঙ্গ - আশঙ্কা পরিবেশবিদদের
গত কয়েক বছর ধরে উত্তরবঙ্গের ছোট ছোট নদী, খাল দখল হয়ে যাচ্ছে। বড়ো নদী থেকে বালি মাফিয়ারা অবলীলায় বালি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আর এবার তার পরিনাম ভোগ করতে চলেছে উত্তরবঙ্গের মানুষ। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গড় বৃষ্টিপাত হবে স্বাভাবিকের থেকে বেশি। পূর্বাভাস সত্যি হলে কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে সেটা ভেবে ভূগোলের গবেষক ও আবহাওয়াবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরের শহর এলাকায় বৃষ্টির জল নিকাশি নালার মাধ্যমে যে ছোট নদীগুলোতে পড়ে সেগুলো মানুষের জবরদখলে মৃতপ্রায় হয়েছে। তাই জল বের হওয়ার পথ এখন প্রায় রুদ্ধ। সামান্য বৃষ্টিতে শহর জলবন্দি হচ্ছে। গত বছর ২৪৮.০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিতে গোটা শিলিগুড়ি শহর হাবুডুবু খেয়েছে।
শহরের সন্তোষী নগর, পরেশ নগর, ভানুনগর, অশোক নগর, প্রকাশ নগর, চম্পাসারি, বাঘাযতীন কলোনিতে বাড়ির রান্নাঘর, শোওয়ার ঘরে জল ঢুকেছে। তল্পিতল্পা গুটিয়ে খাটের উপর বসে রাত কেটেছে মানুষের। ঘরদোর জলেভেসে আসা আবর্জনায় ভরেছে। বিধান মার্কেটে জল উথলে রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকানের মেঝে ভেসেছে। শহরের বাঘাযতীন পার্কের কাছে রাস্তায় কোমর সমান জলের স্রোত বয়েছে। শিলিগুড়ি শহরের মতো কিছু শহরে নদীগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আগের অবস্থায় ফেরানো দুষ্কর বলেই মনে করছেন নদী গবেষকরা। তাঁদের মতে, নদীগুলোর উৎস মুখে ভারী বর্ষণ হলে হড়পা বানের বিপদ গর্জাবে। শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দা তথা ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক মধুসূদন কর্মকার বলেন, “শিলিগুড়ির পঞ্চনই, মহিষমারি, ফুলেশ্বরী, জোরাপানি, সাহ দখলদারদের কবলে পড়ে নালায় পরিণত হয়ে সামান্য বৃষ্টির জল ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে। একই পরিস্থিতি মহানন্দার। উৎস মুখে ভারী বর্ষণের জেরে হড়পা বানের ধাক্কায় মহানন্দা নদী শহরের জনপদ ভাসিয়ে বইলেও আশ্চর্যের কিছু নেই।” শুধু কি শিলিগুড়ি শহর? বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার শহর। জলপাইগুড়ি শহরের করলা নদী নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায় হয়েছে। ধরধরা নদী জবরদখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ময়নাগুড়ি শহর সংলগ্ন ধরলা নদী দখল করে তেজপাতার চাষ চললেও দেখার কেউ নেই।