Type Here to Get Search Results !

সম্পাদকীয় বাংলার রাজনীতি কি ধীরে ধীরে ধৰ্মীয়-রাজনীতির কালো অন্ধকারে প্রবেশ করছে?

 সম্পাদকীয় 


বাংলার রাজনীতি কি ধীরে ধীরে ধৰ্মীয়-রাজনীতির কালো অন্ধকারে প্রবেশ করছে? 



  এক কথায় এই প্রশ্ননের উত্তর -'হ্যাঁ'। এই মুহূর্তে কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দলের মনোভাবে এটা স্পষ্ট। বাংলায় হিন্দু ভোটার কমবেশি ৭০ শতাংশ ও মুসলিম ভোটার কমবেশি ৩০ শতাংশ। এই অনেকটাই দুই রাজনৈতিক দলের যেমন মাথা ব্যথার কারণ, তেমন ভয়েরও কারণ। তৃণমূল ভাবছে হিন্দু ভোটের অন্তত ৪০ শতাংশ ও মুসলিম ভোটের অন্তত ২৫ শতাংশ তাদের পেতেই হবে। তাহলেই তাদের ১৫ বছরের গদি আরও দীর্ঘদিন অক্ষয় থাকবে। অন্যদিকে বিজেপি ভাবছে তাদের কপালে মুসলিম ভোট নেই। তাই হিন্দু ভোটের অধিকাংশটাই তাদের চাই। ব্যস, ধৰ্মীয় মেরু করণকে স্পষ্টত তারা ব্যবহার করতে চাইছে। রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মীয় পরিচয়কে ভোটের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যা বামপন্থীদের শ্রেণী-ভিত্তিক রাজনীতির বিপরীতে গিয়ে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে জনভিত্তি তৈরি করছে এবং এর ফলে রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণ বাড়ছে। 


** এর কারণ ও প্রভাব:


   * হিন্দুত্ববাদের প্রভাব: বিজেপি'র উত্থান ও ভারতের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দু পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি শক্তিশালী হয়েছে, যা 'বাঙালি হিন্দু' পরিচয়কে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে।


  * দলিত রাজনীতির পুনরুজ্জীবন: মতুয়া আন্দোলন ও অন্যান্য দলিত-ভিত্তিক আন্দোলনগুলো ধর্মীয় পরিচয়ের সাথে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা যুক্ত করে নতুন করে গতি পেয়েছে, যা রাজনৈতিক মেরুকরণে ভূমিকা রাখছে।


  * পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি: রাজনৈতিক দলগুলো (যেমন তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি) ধর্মীয় ও আঞ্চলিক পরিচয়ের ধারণাগুলোকে কাজে লাগিয়ে জনভিত্তি মজবুত করতে চাইছে, যা শ্রেণী-ভিত্তিক রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করছে।


  * ধর্মীয় মেরুকরণ: একদিকে যেমন হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, তেমনই অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় পরিচয়ের ব্যবহার—উভয়ই রাজনৈতিক সংহতিকে প্রভাবিত করছে এবং সমাজের বিভাজন বাড়াচ্ছে।


  * রাষ্ট্রীয় নীতি: বাংলাদেশের মতো দেশে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করাও ধর্মকে রাজনীতির সাথে যুক্ত করার একটি উদাহরণ, যদিও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই প্রবণতা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ঘটছে। 


  বর্তমান আবস্থা অবশ্যই বিচার্য। শনিবার প্রাক্তন তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীর মুর্শিদাবাদে 'বাবরি মসজিদ' এর শিলান্যাস করেছেন। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি টাকা ব্যয় করে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির স্থাপন করেছেন ও তারও আগে অযোধ্যায় রামমন্দিরের সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আবার যেদিন হুমায়ুন কবীর বাবরি মন্দিরের সূচনা করলেন, সেদিনই বিজেপি ঘোষণা করলেন তারা পশ্চিমবঙ্গে রামমন্দির তৈরী করবে। তার ফলে পিছনে চলে গেলো - কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যর মতো জ্বলন্ত ইস্যু - যার দিকে নজর দেওয়াই ছিল সরকারের প্রধান কর্তব্য। কিন্তু মানুষ এই রাজনীতিতে গা ভাসিয়ে ছুটে চলেছে। তারা ভুলে গেছে তাদের জীবনের অধিকারগুলো। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় এখন বলতে হয় - 'এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলোক জ্বালো।'

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.